ADS

728 x 90

Post your add here

জাহাঙ্গীরনগরের পরীক্ষা-ফলাফল

শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে গড়ে বেশ কমন/সচরাচর যে মান-অভিমান/গোস্বাগিরি চলতে থাকে তা হলো পরীক্ষার রেজাল্ট দেরি সংক্রান্ত। এমনকি আজও, যখন ফ্লু বাধিয়ে শুয়ে আছি, চোখে পড়ল একটা পোস্ট। এমন একজনের পোস্ট যাঁকে আমি সাংবাদিক হিসাবে কদর করে থাকি। বলাই বাহুল্য, বিরক্ত-বিক্ষুব্ধ পোস্ট, রেজাল্ট দেরি নিয়ে। ফ্লু-তে ফ্রুট খেতে হচ্ছে, কিন্তু ফ্রুটফুল কিছু করা হচ্ছে না। ভাবলাম ‘জাতি’র জন্য একটা কাজ করি।

featured-image

যে কোনো পর্বের/বর্ষের ফলাফল ৯০ দিনের মধ্যে দিয়ে দিতে হবে এরকম একটা বিধান ছিল বেশ অনেক বছর। বলাই বাহুল্য, অকার্যকর। এর মধ্যে গত ১৮ জুলাই পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের স্বাক্ষরিত আরেকটি চিঠি/হুকুমপত্রে এটাকে ৭৫ দিন করে দেয়া হয়। এই দিন বেঁধে দেয়ার ভিতর বিরাট একটা শুভঙ্করের ফাঁকি আছে (বজ্জাতি, বদমায়েশী, অপদার্থতা এসব শব্দ প্রয়োগ না করাই হয়তো শোভন)। এটা শিক্ষার্থীদের কাছে “হাততালি” পেয়ে সাধারণ শিক্ষকদেরকে শত্রুপক্ষ বানানোর একটা কৌশল। এই বিধানটুকু খালি জানলে মনে হবে শিক্ষকেরা কত অপদার্থ! কিন্তু প্রশাসনের দিক থেকে যেসব আউলা-ঝাউলা কাজকর্ম (গ্রামদেশ হলে হয়তো বলতো হেগে একশেষ করে ফেলা) এগুলোর অন্যতম কারক তা আর এতে বোঝা হয়ে ওঠে না।

এটাও ঠিক শিক্ষক এবং প্রশাসক (দুই গুলিয়ে ফেলবেন না) নানান রকমের আছেন। সকলেই হয়তো জানেন। কিন্তু ভুলে যান বলে বলতে হলো। তবে আজকে এগুলো বিশদ করব না। জনগণ দাবি জানালে আরেকদিন করা যাবে। একটা সংক্ষিপ্ত দিকনির্দেশনা হিসাবে জানিয়ে রাখি যে শিক্ষক হতে পারেন:
# শিক্ষার্থী কিছু জানতে চাইলেই খেঁকিয়ে-ওঠা
# নির্দিষ্ট কিছু শিক্ষার্থী কিংবা নির্দিষ্ট কিছু গুণ্ডাশিক্ষার্থীর প্রতি তেলতেলে আচরণওয়ালা
# প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় গেলেই পেটের ব্যথা গাঁটের ব্যথা বলে কিছু থাকে না; লেফটরাইট ভঙ্গিতে কাজ শেষ করেন আর এখানে এলেই গাঁইগুঁইয়ের শেষ নাই
# ক্লাসের রুটিনের ন্যূনতম পরোয়া না করা (অবশ্যই পাবলিকে)
# উইকএন্ড কোর্সের দিনে অশ্বশক্তিসম্পন্ন মুডে আসা
# একটা যৌগবাক্য লিখতেই হেঁদিয়ে পড়া এবং এগুলো যে তাঁর শাস্ত্রে জরুরি নয় তা বলতে থাকা
# একটা শর্তযুক্ত বাক্য লিখতেই নেতিয়ে পড়া ও ইম্প্যাক্ট জার্নালে শতাধিক রচনার আমলনামা জানানো
(খুবই সংক্ষিপ্ত একটা দিক-নির্দেশনা দিলাম)

এখন বাস্তবে যতরকমের পরীক্ষা চালু আছে তার একটা খসড়া তালিকা:
৭০ + ৩০ দ্বৈত পরীক্ষক
৬০ + ৪০ দ্বৈত পরীক্ষক
৪০ + ৬০ একক পরীক্ষক
যে বিভাগে ৬০ নম্বরের ইনকোর্স তথা ক্লাসচলাকালীন মূল্যায়ন হয় এবং ৪০-এর একক পরীক্ষক মূল্যায়ন হয় সেই বিভাগের ৭৫ দিন (বা ৯০ দিন) আর যে বিভাগের ৩০ নম্বরের ইনকোর্স হয় আর ৭০ নম্বরের দ্বৈত পরীক্ষক মূল্যায়ন হয় সেই বিভাগের ৭৫ দিন কি এক হলো? নাকি হওয়া সম্ভব? একটা স্মার্ট ফাইনাল পরীক্ষাতে দুই পরীক্ষার মধ্যে ৩দিন গ্যাপেরই বা কি আবশ্যকতা? জনপ্রিয় থাকার জন্যই তো! নাকি? সপ্তাহে দুইদিন ছুটি থাকার কারণে প্রায়শই এই গ্যাপটা ৫ দিনও গিয়ে ঠেকে। কী হেতু?

চিন্তাশীল শিক্ষার্থী, সাবেক শিক্ষার্থী, অভিভাবক, পেশানিষ্ঠ শিক্ষক, সাবেক শিক্ষক, সাধারণ জন-নাগরিক যে কেউ ক্রিটিক্যাল প্রশ্নগুলো সাজাতে পারবেন। কিংবা তাঁদের সেই প্রশ্নগুলো সামনে এলে আরও বিশদে আলাপ করতেও আমি রাজি আছি।
কিন্তু “আমরা তো ৭৫ দিনেই রেজাল্ট তৈরি করতে বলি, শিক্ষকেরা করেন না” ধরনের সস্তা শিশুতোষ প্রপাগান্ডা করে শিক্ষার্থী বনাম শিক্ষকের বিরোধ বাধিয়ে দেয়াকে আমি যদি বদমায়েশী নাও বলি, লোকে বলবে। আমার অভিজ্ঞতা বলি। মাত্র সেদিন। আমি একটা পরীক্ষা পর্ষদের সভাপতি। ১০ মিনিটে ফয়সালা দেয়া যায় এমন একটা লঘু বিষয়ে ৫৬ দিন পরীক্ষা অফিস খেয়ে দিয়েছে। এই বিষয়ে সকল নথি মজুদ আছে। আপনাদের মাজার আর মস্তিষ্কের জোরের এই হাল; আর দোষ দেবার সময় আমাদের সামনে এগিয়ে দেবেন?
চলুন হে প্রশাসকবৃন্দ আমরা তিনপক্ষ প্রকাশ্য বিতর্ক করি – পরীক্ষা-প্রশাসকপক্ষ, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীপক্ষ এবং আমার মতো পরীক্ষার কাজ ফেলে রাখেন না এমন শিক্ষক পক্ষ। এই আহ্বান এই পত্রের মাধ্যমে জানিয়ে রাখলাম।

0.0 / 10 |