ADS

728 x 90

Post your add here

কবি ও পরীমনি

November 30, -0001 12:00 am

ফিচার গল্প:    পরীমণি ও কবি --------------------------- শেখ হাবিবুর রহমান বাবু কবি ও অর্থনীতির অধ্যাপক এই পৃথিবীতে সৌন্দর্যের যত ব্যাখ্যা তা কেবল কবিই প্রকাশ করেছেন অকৃপণ ভাবে।এই পৃথিবীতে যত নারী অমর হয়ে আছেন তা কেবল কবি সাহিত্যিকের হিরন্ময় শব্দের দ্যুতিতে সম্ভব হয়েছে।মমতাজকে তাজমহল যতটা মহিমান্বিত করেছে তার চেয়ে বেশি অমর করেছে কবির কাব্যে মমতাজ ও তাজমহলের স্তুতিগাথা!ভিঞ্চির আঁকা মোনালিসা তার শিল্পের তুলিতে যতটা অমর হয়েছে তার চেয়ে ঢের বেশি অমরত্ব পেয়েছে এই মোনালিসাকে নিয়ে লিখা কবি সাহিত্যিকের শব্দের যাদুতে। এই পৃথিবীটা মানে পৃথিবীর মানুষেরা সৌন্দর্যের দাস,শুধু দাসই নয়, বশীভূত, একান্তবাধ্যগত আরাধ্য প্রার্থী! যত প্রকার নান্দনিক জিনিসই মানুষকে দেয়া হোক না কেন--যেমন কুসুমবাগ, রাজ্য,ভোগ বিলাসিতার যত সামগ্রী আছে--- সব কিছু এমন কি সকল বিশ্ব-বিলিয়নিয়ারদের অঢেল অর্থ,মনোরম প্রাকৃতিক লীলাময় দৃশ্য মানে স্বর্গীয় বালাখানা ইত্যাদি দেয়া হলেও সব শেষে সেই পুরুষ নারীর কাছেই ফিরে আসে, এখানেই শেষ নোঙ্গর ফেলে-- বলে, পৃথিবীর সবকিছু তুচ্ছ তোমার কাছে নারী!আর সেই নারী যদি হয় রূপ লাবন্যে মনোহরা, বলনে প্রিয়ংবদা তবেইতো অতি সংবেদনশীল মানব প্রেমিক তখন কবি হয়ে বলে, বিশ্ব সংসার তন্নতন্ন করে খুঁজে এনেছি একশ আটটি নীল পদ্ম!কিংবা আমার মত কবিও বলে, মিনতি করে বলি,আমি তোমার উষ্ণ করতলে কবি হতে চাই,আমার কবিতার জন্য তোমার প্রেম বড় প্রয়োজন! কিংবা কবি রুদ্রও বলে,আমি সেই নতমুখ নীরবে ফিরে যাওয়া অভিমান, আমাকে গ্রহণ কর! এই পৃথিবীটাকে বলা হয় টাকার বশ,কিন্তু আমরা যারা সৌন্দর্য পিয়াসু কবিমনা আমরা বলি, না, এই পৃথিবীটা নারীর রূপলাবন্যের কাছে মাথাকুটে মরে!এই বাংলার প্রতিটি কবি মানসই ফুটিয়ে তোলেছে নারীর বাস্তব রূপকে স্বর্গীয় মহিমাময় করে,মর্ত্যলোকের রক্তমাংসের নারীকে এই কবিমনারাই অতিমানবী করে দেবীরূপে প্রতিষ্ঠা করেছে,কবিরাই সৃষ্টি করে নারীস্তুতির গীতি কবিতা যা নারীকে সুরের ঝংকারে অনবদ্য মোহনীয় কল্পলোকের মানসী করে পুরুষের কল্পনায় স্বর্গীয় অপ্সরা করে তোলে।রবি ঠাকুরের লাবন্য,নজরুলের নার্গিস, জীবনানন্দের বনলতা,সুনীলের নীরা--এরা একেক জন রক্তমাংসের নারী হয়েও আজ বাঙ্গালি মানসপটে চির সৌন্দর্যের নারী প্রতিক হয়ে উঠেছে!বাঙ্গালি কোন ললনাকে যদি বলা হয় প্রিয়া,তোমাকে লাবন্য-বনলতা- নার্গিসের মতই মনে হয়,সে নারী মনেমনে আনন্দে আত্মহারা না হয়ে কি পারে?--হবেই তো,কারণ কবিদের সৃষ্টি নারী হয়ে উঠে প্রেমময়, কোমল-কলাময়,গীতল-লাস্যময়, এরা কখনো জরাগ্রস্ত হয়না,তারা যৌবন হারায় না, এই মর্ত্যলোকের রক্তমাংসের নারীই কবির কাব্যের তুলিতে হয়ে যায় অপ্সরা! কিন্তু বাস্তবে যাদেরকে আমরা হাল আমলের কিংবা অতীত চলচিত্রের কিংবা নাটকের সেন্সেশনাল নায়িকা বলি মডেল বলি, তারা সময়ের মরচে ধরা অস্ত্রের মত সৌন্দর্যের পলেস্তারা হারিয়ে জরাগ্রস্ত,তারপর মেদবহুল অত:পর হয়ে উঠে স্মৃতির কঙ্কাল, কারণ তাদেরকে নিয়ে কোন কবি লেখকেরা লিখেনা কবিতা,গল্প কিংবা উপন্যাস।তারা চলচিত্রের নায়িকা হলেও হতে পারেনা সাহিত্যের কোন চরিত্র,তাই তারা যৌবন হারায়,রূপলাবন্য হারায়,জরাগ্রস্ত হয়ে  বিস্মৃতির অতলান্তে চলে যায়। এই দেহবল্লরীরা হয়ে উঠেনা কোন কবির কবিতার নায়িকা,ঔপন্যাসিকের গল্পের নায়িকা, তারা হয়ে যায় ধনী শ্রেণির ভোগের সামগ্রী, তারা হয় টাকার কাছে পরাজিত, তাই তারা অপরাজিতা হতে পারে না। আমরা যদি বিশ্বনারী চরিত্রের দিকে তাকায় দেখি কিছু নারী কবি সাহিত্যিকের স্তুতিকাব্যের ফলে ইতিহাসে চিরসৌন্দের প্রতিক ---রক্তমাংসের নারী হয়েও হয়ে উঠেছে চির রহস্যময়, চির যৌবনা,হয়ে উঠেছে বিশ্বপুরুষ মানসে এক স্বর্গীয় অপ্সরা।তাইতো যখন কোন নারীকে বলি,তুমি হেলেন অব ট্রয় কিংবা সৌন্দর্যের রানী ক্লিওপেট্রা, সেই নারি কি আনন্দে আত্মহারা না হয়ে পারে?এই দুই নারীকে নিয়ে কবি সাহিত্যিকেরা লিখেছেন নানান অনবদ্য আখ্যান! কিন্তু বাস্তবে আমরা তাদের চেয়েও বিশ্বসংসারে ঢের বেশি সুন্দর নারী দেখেছি, তারাও এক সময় হয়ে উঠে বিশ্ব ধন কুবেরদের ভোগের সামগ্রী, আমরা বলতে পারি মেরিলিন মনরো,ম্যাডোনা, প্রিন্সেস ডায়না --তারা কিন্তু কোন কবি সাহিত্যিকের নজর কাড়েনি,কিংবা সাহিত্যে আসন লাভ করতে পারেনি,তারা আসন পেয়েছিল বা পেয়েছে ধনীদের বিলাসবহুল প্রাসাদে এবং এক সময় অস্থিত্বের অতলান্তে হারিয়ে যাবে।তাই কবিত্বই হচ্ছে এক অমল অমূল্যরতন, পরশপাথর যার পরশে হয়ে যায় নারী অপ্সরা! এখন প্রসঙ্গে আসি এই অতিমারীর দিনে বিশ্বসংসারে যখন ঘনিয়ে এসেছে ক্রান্তিকাল,মহা সর্বনাশা এক অদেখা বিনাশী ভাইরাস তার নামও যেন এক স্ত্রী লিঙ্গীয় করোনা! তার ছুবলে যখন বিশ্বসংসারে চলছে কান্নাহীন নিঃশব্দ গণকবর, গণচিতার সারি,ধরা যায়না ছুঁয়া যায়না এমনকি কান্নাটিও করা যায় না এমন এক মৃত্যুকূপের খাদের কিনারায় এসে ঘোটা মানব সভ্যতা বয়ে বেড়াচ্ছে অতীত কুকর্মের অচ্ছুত এক ব্যধি---এমন মহামারীর দিনেও সমাজের এক ভোগবাদী নারীমাংস লোভি সমাজের মুখোশ উন্মোচন করতে পারমাণবিক বোমার মত বিস্ফারণ ঘটিয়ে দিল এক পরমা সুন্দরী নারী--পরীমণি! এই লাস্যময়ী-রহস্যময়ী -লবান্যময়ী রক্তমাংসের এক নারী কোন এক গ্রামীণ জনপদ থেকে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরে এসে এই মেগাসিটির মুখোশ দিল খুলে!ঢাকায় যে টাকা উড়ে তাই হাড়েহাড়ে প্রমাণ করে দিল এই নারী! তার বিলাশবহুল মধুকঞ্জবনে নিশিত রাইতে আবির্ভূত হত মধুকর-- যেখানে এই নারী মাংসের সন্ধানে আসত দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোর, অর্থ ও মাদক পাচারকারী ভুঁইফোড় ধনী ও ধনীর বখাটে লম্পট, মাতাল মদখোর কাপুরুষেরা কাড়িকাড়ি কাল টাকা নিয়ে!আমাদের আধুনিক পুলিশ-র‍্যাব-ডিবি-এসবি -সি আই ডি--সকলেই এক ফলপ্রসু রাজকীয় অভিযানে সেই রাধাকুঞ্জ থেকে কুড়িয়ে নিয়ে এল এক ভোরের শিশির মাখানো ঘাসের উপর ঝরে পড়া শিউলি-বকুল ফুল যা শুধুই ক্লান্ত!কিন্তু ফুলের মধুপায়ী সেই মাতাল মধুকরকে ধরাশায়ী করতে অপারগ হল---হবেইতো!কারণ ভ্রমর মধুপান শেষে উড়ে যায় তার আপন ঠিকানায়,রেখে যায় সেই ফুলে বিষের পরাগায়ণ! এত বড় এক মধুকরদের তালিকায় সবশ্রেণি পেশার উর্ধবতন পুরুষপ্রবরই আছে নেই কোন কবি-সাহিত্যিক!কবি বটেই সৌন্দর্যের পুজারী, একথা এই বাংলার কোন পুরুষই বুকে হাত রেখে বলতে পারবেনা যে এই ঝরে পড়া শিউলি-বকুল পরীমণি---এখনো সেযে-কোন নারী, সে অপরূপা-লাস্যময়ী-লাবন্যময়ী না!কিন্তু তার আস্তানায় নেই কোন কবির নাম--একজন কবি হিসাবে কেন যেন কবিদেরকে অর্থকড়িহীন ফকির মনে হল!আহারে,যদি কোন কবি কোনদিন সেই নারীর দামি মধুকঞ্জবনে একবার পদধূলি দিত নিশ্চয় লেখা হত নতুন করে নতুন কোন অভিধায় প্রেমের পদ্য রাশিরাশি, এই পরীমণিই হয়ে উঠত আরেক গল্প-কবিতা-উপন্যাসের নতুন কোন নায়িকা লাবন্য-নীরা-নার্গিস-বনলতা এবং কালের সাহিত্যে হয়ে উঠত মর্ত্যলোকের এক রক্তমাংসের নারী চিরযৌবনা এক অপ্সরা পরীমণি!কিন্তু বিধিবাম , হঠাৎ শুনি এক অলীক না সত্য তা জানিনা--এক কর্পোরেট ব্যাংকার যিনি আধেক কবি আধেক অনুবাদক তার নাকি বিচরণ ছিল সেই মধুকঞ্জবনে! আশান্বিত হলাম কবিও বাদ পড়েনি সেই রূপলাবন্যের রানী রাধার রূপের পিয়াসি হতে!কিন্তু এই কবি যে তা অস্বীকার করে দিলেন আমাকে আশাহত করে!তবে এই আধেক কবি আধেক সাহিত্যিক নিশ্চয় যায়নি সেই রাধাকুঞ্জবনে,যদি যেতেন তবে লিখতেন তিনি কোন প্রেমের কবিতা কিংবা দুয়েকটি হাইকো প্রেমের বানী!আমাদের মান্যবর কবিবরেষু নির্মলেন্দু গুণদা যখন এই পরীমণির রূপলাবন্যের প্রশাংসা করে বললেন,পরীমণি লাবণ্যময়ী -লাস্যময়ী এক রহস্যময়ী সুন্দরের আধার,তখন আমি গুণদার অনুজ কবি হয়ে আশান্বিত হলাম যে না এখনো কবি আছে এই দেশে,তাই আমিও যে দূর থেকে এই ঝরে পড়া শিউলি-বকুলের জন্য দুয়েক লাইন পদ্য-হাইকো প্রেমের বানী লিখিনি তা কিন্তু নয়! এবার আসি সেই আদম(আ:),নুহ নবী থেকে শুরু করে আরও অনেক নবীর বিদায়ের পর এই মর্ত্যের পৃথিবীর মানুষ  যখন পাপাচারে নিমজ্জিত তখন দুজন ফেরেশতা হারুত মারুতকে মানুষের গুণদিয়ে এই পৃথিবীতে স্বয়ং স্রস্টা চ্যালেঞ্জ দিয়ে শর্ত দিয়ে পাঠালেন তাদেরকে!তারাও এক রহস্যময়ী নারীর কাছে পরাজিত হয়ে ঝুলে আছে পা দিয়ে আকাশে!তারা ঐ নারীর কয়েকটি শর্তের মধ্যে কমপাপের শর্ত মদ্যপানকে বেছে নিয়ে অবশেষে সকল পাপকাজেই লিপ্ত হয়ে গেল!তাই নারি নয় সমস্যা সমস্যা হচ্ছে মদ-মাদক-সুরা! নারীকে যারা এই বিপদগামিতার দিকে ধাবিত করে সেই সকল নষ্ট কাপুরুষেরকেও আনতে হবে আইনের অধীন শুধুকোন অবলা নারীকে নয়। শেষ করব কবি ও পরীমণি দিয়েই।এই মেয়েটির সৌন্দর্য নিয়ে যখন এক কবি গায়লেন দুয়েক লাইনের প্রশাংসার হাইকো একদল কবিকে করল তুলাধুনা!এই নারীর কাছে যদি কবিরা যেতেনে তবে মদ মাদক নিয়ে যেতেন না,যেতেন শব্দ নিয়ে,রচিতেন অমর কাব্য,নারীটি হত কোন কবিতা কিংবা উপন্যাসের নায়িকা,পেত অমরতা অথচ তার কাছে গেল সমাজের নষ্টমানুষ মদ গিলতে,মদ কিনতে,মাতাল হতে,তারা এই নারীকে এক আঁস্থাকুড়ে নিক্ষেপ করে দিয়ে এল।নিশ্চয় সে অতিশয় প্রেমময়ী ছিল খপ্পরে পড়ে সে হল ছলনাময়ী, তার কাছে যদি সুন্দর, প্রেম, লাবন্য  না থাকত তবে কেন হাল আমলের এক সুদর্শন গোয়েন্দা কর্মকর্তা কুপোকাত হল!তাকে দেখতে আদালতে ঔৎসুক্য জনতার ভীর হল,তার রূপের কাছে শতশত ক্যামেরার ফ্ল্যাশব্যাক কেন ম্লান হয়ে উঠল,কেন গুণদা লিখলেন,পরীমণির সুন্দর মুখ থেকে চোখ ফেরানো যায়না,তার দেহাবয়বে আছে সৌন্দর্যের সুষমা বিকাশের উপাদান?সেই সাথে এই ভোরের শিশিরের সাথে  দুর্বাঘাসে ঝরে পড়া এই শিউলি-বকুল পরীমণির জন্য আমার কয়েকটি হাইকো উঠে এল প্রাসঙ্গিক হয়ে।এই কয়েকটি হাইকো দিয়েই শেষ করছি "পরীমণি ও কবি"! সৌন্দর্যের কাছে পরাজিত বিষয়ক কয়েকটি হাইকো ----                              ১ তুমি সি আই এ/তুমি কে জি বি/আমি সৌন্দর্যের রানি/আমার কাছে/ আসলে সবাই/হয়ে যায় কবি!                          ২ নারীর রূপের কাছে/অতিকায় দৈত্যও/বশীভূত হয়!                           ৩ একদিন /সৌন্দর্যের রানি/ক্লিওপেট্রার মত/তোমার ইতিহাসও/লিখা হবে!                           ৪ যে হাতে থাকবে/কঙ্কণ বালা/সেই হাতে আজ/আইনের হাতকড়া!                          ৫ সুরা ও সাকীর /নেশা পেলে/নারীর প্রেমে মজ/ দিনের আলোতে/গন্ধ লুকাতে/দামি সুগন্ধি খুঁজ!                           ৬ হাতি বাগান বিনষ্ট করে/শিল্পপতি নারীর শৈল্পিকতা নষ্ট করে!                            ৭ নারীর সৌন্দর্যের কাছে পুরুষের বীরত্ব পরাজিত হয়!                            ৮ নারীর সৌন্দর্যের কাছে বীরের তলোয়ার ভেঙ্গে খানখান হয়!                            ৯ যে পুরুষ যুদ্ধের ময়দানে বীর বাহু সে পুরুষ নারীর সৌন্দর্যের কাছে সহজেই কাবু!                              ১০ যে পুরুষ শুধু বই পড়ে পড়ে জ্ঞানার্জন করে বাস্তব জীবনে তাদের দ্রুত পদস্খলন হয়!                              ১১ বিবাহিত পুরুষ অন্য নারীর প্রেমে পড়লে নিজের স্ত্রীর খুঁত খুঁজে বেড়াবে!                              ১২ একমাত্র সুন্দরের কাছেই সুন্দরের পরাজয় হয় ;কারণ পুরুষের চোখ সার্বক্ষণিক সৌন্দর্য খুঁজে বেড়ায়!

10.0 / 10 |