অর্থনীতিতে অতিমুনাফা বুমেরাং
November 30, -0001 12:00 am
অর্থনীতির বাস্তব গল্প: টিট ফর টেট! (আঘাতে-প্রতিঘাত অত:পর ব্যাঘাত) শেখ হাবিব বাবু অর্থনীতিতে জাতীয় আয় প্রবাহ দেখলে বুঝতে পারবেন--একজনের আয় অন্য জনের ব্যয়,অর্থাৎ ফার্মগুলো উপকরণের(ভুমি+শ্রম+মূলধন+সংগঠন) জন্য যে ব্যয় সেটা সরবরাহকারী পারিবারিক খাতের কাছে আয় হিসাবে যায়, আবার পরিবারগুলো সে আয় দিয়ে ফার্মের উৎপাদিত পণ্য ক্রেতা হিসাবে কিনে এবং পরিবারের আয়গুলো আবার ব্যয় আকারে ফার্মের কাছে চলে যায়।এটাকে জাতীয় আয়ের চক্রাকার প্রবাহ বলে। উদাহারণ দিয়ে যদি বলি,ধরাযাক রাষ্ট্রের সামগ্রিক উৎপাদন খাত ১০০ কোটি টাকার পণ্য উৎপাদন করল এবং তার জন্য পারিবারিক খাতকে ১০০কোটি টাকা (খাজনা+মজুরি+সুদ+মুনাফা)বিভিন্ন আয় হিসাবে বণ্টন করে দিল বিপরীত ক্রমে পরিবারগুলো সেই বণ্টিত আয় দ্বারা ফার্মের উৎপাদিত ১০০ কোটি টাকার পণ্য কিনে ভোগ করল--এই ভাবে পরিবারের আয় ফার্মের কাছে ব্যয় হিসাবে যায়, আবার ফার্ম এই ১০০কোটি টাকা দিয়ে পরিবারের কাছ থেকে উপকরণ ক্রয় করে যা পরিবারের জন্য আয় আবার ফার্মের জন্য ব্যয়! এভাবেই জাতীয় আয়ের ভারসাম্য অর্জিত হয়। গল্পটি অবশ্যই অনেকে বুঝে গেছেন যারা অর্থনীতি বুঝেন তারা,আর যারা এত মারপ্যাচ বুঝেনা তাদের জন্য বলছি--আপনি আপনার উৎপাদিত পণ্যের দাম বাড়ালে পরিবারগুলো তাদেত সরবরাহকৃত উপকরণের দাম বাড়াবে,মূলত আঘাত করলে পাল্টা আঘাত আসবে--এভাবে যদি একজন বিক্রেতা তার দ্রব্য অতিরিক্ত বর্ধিত দামে বিক্রি করে অস্বাভাবিক মুনাফা করে তা আবার বিপরীত ভাবে অন্যজনের কাছে বেশি হারে ব্যয় আকারে চলে যাবে। বাস্তব মূলগল্পটা বলি:আজ আমি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বড় মসজিদে জুম্মার নামাজ আদায় করে বের হয়েছি,এমন সময় মাতৃভান্ডারের মিষ্টি বিক্রেতা মসজিদের সামনের ফলের দোকানে মালটার দাম জিজ্ঞাস করতেই ফল বিক্রেতা পালটা দাম বলল--কেজি ৪০০টাকা,এই দাম শুনে মিষ্টি বিক্রেতার মাথায় হাত! ফলবিক্রেতাকে বলল,বলিস কি?গতকাল ছিল ৩০০টাকা আজ ৪০০টাকা! আমি মিষ্টি বিক্রেতার চেহারার অভিব্যক্তি এবং দরকষাকষি দেখলাম,দেখলাম মিষ্টি বিক্রেতা অসন্তুষ্ট, নানান কথা বলার চেষ্টা করছে।ফলবিক্রেতাও হিসাববিদের মত বিভিন্ন অজুহাত তুলে ধরল--আমদানি খরচ,ডলার,ইউক্রেনের যুদ্ধ,সিন্ডিকেট ইত্যাদি। মিষ্টি বিক্রেতাকে আজ ফলবিক্রেতা যে কথাগুলো শুনাল ঠিক যখন ১৬০টাকা কেজির মিষ্টি প্রথমে ১৮০,এরপর ধীরেধীরে ২০০টাকা থেকে এখন ৩০০টাকা বিক্রি করে আমিও মিষ্টি কিনতে গিয়ে প্রশ্ন করতাম যে মিষ্টির দাম এত বাড়াচ্ছেন কেন? মিষ্টি বিক্রেতা আমাকেও বলত ময়দা,চিনি,দুধ তেল ইত্যাদির দাম বাড়ছে দাদা,তাছাড়া ইউক্রেন যুদ্ধ,ডলার,সিন্ডিকেট ইত্যাদি কত কি!এমনকি তখন বলত দুধওয়ালা দুধের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে,দুধওয়ালাকে জিজ্ঞাস করলেও একই উত্তর দেয়--গরুর খাবার,ঔষধ,যাতায়াত,ডলার,ইউক্রেইন যুদ্ধ, সিন্ডিকেট ইত্যাদি।আবার আমরা যারা চাকুরী জীবী আমরাও একই ভাবে সরকারকে চাপ দিতে থাকি বেতন বাড়ানোর জন্য,সরকারও আবার আমাদের চাপে নতুন বাজেটে জনগণের উপর টেক্সবাড়াবে,ভর্তুকি কমাবে বা বাড়াবে,পণ্যের উপর টেক্স বাড়াবে,পণ্যের দাম বাড়বে--অর্থাৎ আঘাতে পালটা আঘাত-প্রতিঘাত এবং সর্বশেষ সবকিছুতেই ব্যাঘাত ঘটবে সেটাই স্বাভাবিক। মুরাল: দ্রব্যের দাম একে অপরকে আঘাত করে।আজ আপনি একটি দ্রব্য অতিমুনাফার জন্য বিক্রি করছেন বেশিদামে বেশি অজুহাত দেখিয়ে,ঠিক তেমনি আপনি যখন অন্যদ্রব্য কিনতে যাবেন সেই অজুহাতে সেই দ্রব্যবিক্রেতাও একই আঘাত করে অতিমুনাফা করে আপনার অর্জিত আগের মুনাফা নিয়ে যাবে অনায়াসে!ফলে আঘাতে আঘাতে জনজীবনে ব্যাঘাত ঘটবে।