আমি: হ্যালো খালা,৪১০ থেকে রিনিকে একটু ডেকে দিন না,
খালা:অফেক্ষা করেন,দিতাছি বলেই খালা ডাকল,৪১০,রিনি খালা, আফনার ফোন! রিনির মোহনীয় গলার মিহি কণ্ঠের ক্ষীণ আওয়াজ ভেসে এলো আমার টেলিফোন রিসিভারে,আমি আবেগে কাঁপছি থরথর, বক্ষ আমার ধুরুধুরু!
এবার রিনির পায়ের আওয়াজ ভেসে এল আমার কানে,আমি শুনতে পাচ্ছি রিনির পায়ের সিঞ্চন!
রিনি রিসিভার ধরেই বলল, হ্যালো, কে বলছেন?
রিনি দ্রুত পায়ে নেমে আসায় আমি রিনির পুনঃপুন হৃদকম্পন শুনতে পাচ্ছি!বিমুগ্ধ মোহিত কল্লোলিত আমি কাঁপাকাঁপা স্বরে বললাম,
আমিতো কেউ না,সুদূর হিমালয় থেকে নেমে আসা এক বরফ মানব!
রিনি একটু অভিমানী স্বরে বলল,মানে!দেখুন,আমি কিন্তু অপরিচিত কারো সঙ্গে একদমই কথা বলিনা!
আমি কিছুটা বিচলিত হয়েই বললাম,আমার নাম কবি,আসলে এটা আমার নিজের দেয়া নাম!
রিনি হাসতে হাসতে বলল,বরফ কিংবা কবি কারও নাম হয় নাকি? আমিও হেসেই বললাম,হয় না বলেইতো নাম রেখেছি বরফ কিংবা কবি।বাইদা বাই,তোমার হোম ডিস্ট্রিক্ট খুলনা,তাই না?
রিনি এবার সাবলিল ভাবেই বলল,হ্যাঁ, কিন্তু মনে হচ্ছে আমাকে নিয়ে স্টাডি করেছেন,তাই না?
রিনি আবার বলল,আপনি কি আ- মা- র,,আই মিন, সিনিয়র?মানে এই যে একজন অপরিচিতাকে তুমি করে বলছেন!"
আমি অপ্রাসঙ্গিক ভাবেই বোকার মত বলে উঠলাম, জানো রিনি?
রিনি ঘুমঘোরের মত মোহগ্রস্ত হয়ে বলল,কি জানব?
আমি বললাম, আমার প্রিয় জেলা,মানে গত কয়েক দিন থেকে আমার প্রিয় হয়ে উঠেছে তোমার খুলনা জেলাটি!আর হ্যাঁ, আমি থার্ড ইয়ার ইকোনোমিক্স!
রিনি এইবার চোখ বড়বড় করে আশ্চর্য হয়েই বলল,বাব্বাহ,ইকনোমিকসের ছেলেরাতো একটু অহঙ্কারী হয়,আর শুনে প্রীত হলাম যে,গোপালের মেয়েদের দিকে আপনাদের চোখ পড়েছে! কিন্তু আমার কাছে কি চান?
আমি একটু নীরব,হঠাৎ বাঙ্ময় হয়ে বলে উঠলাম,কিছুইতো চাই না আমি,শুধু সেদিন যখন ফ্যাকাল্টিতে রিক্সা থেকে নামলে তুমি,সেই যে আমার চোখ পড়ল তোমার মায়াবী চোখের দিকে, আর দীঘল হয়ে নেমে আসা কোমর অব্দি তোমার ঘনকাল কেশদাম,মাইরি,সেইদিন থেকে গত এক সপ্তাহ ঘুমোতে পারিনি!
রিনি বলল,পা-গ-ল নাকি আপনি!
রিনি আবার দুষ্টুমি করে বলল,যান, ঘুমের ট্যাবলেট খান,দেখবেন ঘুম এসে যাবে।
যাক,পাগল বলেন আ-র যাই বলেন তবুতো উপদেশ দেয়ার মত একজন মানুষ পেলাম। এতক্ষণে দুজনেই খুব ফ্রি হয়ে এল,রিনি এবার বলল,ভাইয়া,আপনার হোম ডিস্ট্রিক্ট? কোন হলে থাকেন আপনি?
আমি দৃঢ় কণ্ঠে বললাম,জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ৪১০/ভাসানি হল!
রিনি একটু অবাক হয়ে বলল,বলেন কি ভাইয়া!আমারওতো ৪১০/প্রীতিলতা ,কি অবাক কাণ্ড না!
রিনি: কিন্তু ভাইয়া, আমি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছেলেদের মোটেও পছন্দ করি না!কারণ তারা কেমন যেন একটু ডেস্পারেট হয় একটু অহঙ্কারী,মনে হয় যেন প্রত্যেকেই ব্রাহ্মণ!
আমি একটু দ্রুতই বললাম,টেলিফোনটা আরও কয়েকজন পুরনো পাগল বুকিং দিয়েছে,বুঝলে!
অপর প্রান্ত থেকে মিহি কণ্ঠে ফিসফিস করে রিনিও বলল,হ্যাঁ ভাইয়া, আমার অদূরেই আরও কয়েকজন আপু লাইনে আছে,আমি এখন রাখছি!
আমি অনুনয় স্বরে বললাম,আর একটু সময় দেয়া যায় না,মাত্র এ-এ-এক মিনিট। রিনি সুদীর্ঘ পরিচিতার মতই বলল,বলেন না ভাইয়া, কি বলতে চাচ্ছেন?
আমি এবার সকল দ্বিধা দূরে ঠেলে দিয়ে বললাম,রিনি, আমি তোমাকে ভালবাসি রিনি,
রিনিও অবলীলায় বলে দিল,মরেছেন ভাইয়া, আমিতো বিবাহিতা!
এক সুতীব্র আঘাতে বুকের পাঁজর যেন ভেঙ্গে গেল আমার ঢেউয়ে ভাঙ্গা তীরের মত!
আমি এক দীর্ঘ নিশ্বাস বুকে নিয়েই মনেমনে বললাম,প্রেম অন্ধ,প্রেমিক এক অন্ধ ভিখারী!
সেদিনের পর থেকে ফ্যাকাল্টিতে আমি রিনিকে শুধু দেখেই গেলাম, কিন্তু রিনি কোন দিন চিনলা দেখলনা--এই প্রেম-প্রতারিত অন্ধ প্রেমভিখারিকে!
